স্টাফ রিপোর্টার: মো: মিজানুর রহমান মজনু দৈনিক সূর্যের ডাক।
কুষ্টিয়ায় ‘নদী পার হয় না’ নাগরিক সেবা।
কুষ্টিয়া কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়নে ৩০ হাজার মানুষের একটাই কথা ‘নাগরিক সেবা নদী পার হয় না’। এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
পদ্মানদীর তীরবর্তী চরসাদিপুর ইউনিয়নে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ। এখানকার অবস্থা এমন যে, অন্য ইউনিয়নগুলোতে যা যা বিদ্যমান চরসাদিপুরে তার কিছুই নেই। নেই ভূমি অফিস, পোস্ট অফিস, পুলিশ ক্যাম্প কিংবা কোনো সরকারি ব্যাংক।
ইউনিয়নের একমাত্র পাকা সড়কটি এতটাই জরাজীর্ণ যে, সেটি সংস্কারের মুখও দেখেনি দীর্ঘ বছর ধরে। চিকিৎসার জন্য একটি ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও সেখানে জনবল সংকট থাকায় ঠিকমতো খোলা হয় না। এসব সমস্যার কারণে এখানকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের শিকার।
এছাড়াও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। এসব ভাটাগুলোর কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ও ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ স্যালোইঞ্জিন চালিত যানবাহনও এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে ধূলাবালি ও কালো ধোয়ায় নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে এখানকার মানুষের জিবন।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর কারণে চরসাদিপুরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হয়নি। বর্ষা মৌসুমে একমাত্র বাহন হিসেবে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর অধিকাংশ অংশে চর জাগে তখন নৌকা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও পা চালিত যানবাহন দ্বারা চলাচল করা হয়। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও সময় অপচয়ের পাশাপাশি জনজীবনে সৃষ্ট হয় চরম ভোগান্তি।
এ বিষয়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মোঃ শহিদুল আলম (৭০) আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার পদ্মানদীতে সেতু নির্মাণ করুক, নয়তো পাশের জেলা পাবনার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিক।
এরকম আরও অনেকেই আছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সমাধানের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।
ষাটোর্ধ কৃষক মোমিন মণ্ডল জানান, সাদিপুরে ভূমি কার্যালয় নেই। জমির খাজনাসহ অন্যান্য কাজের জন্য নদী পাড়ি দিয়ে শিলাইদহে যেতে হয় সেখানে ঘুষের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে গঠিত চরসাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাদের জন্য ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চারটি মাদ্রাসা এবং চারটি বেসরকারি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে এই সকল সুবিধা এখানে অপ্রতুল এবং অবহেলিত।পদ্মানদীর তীরবর্তী চরসাদিপুর ইউনিয়নে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ৩০ হাজার মানুষ।
একইভাবে, ইউনিয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখানকার মানুষ দিন দিন অবহেলিত হয়ে পড়ছেন। সাদিপুরের কৃষি জমিতে প্রায় ৩৩টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাকা সড়কটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ভাটা এবং স্যালোইঞ্জিন চালিত গাড়ি চলাচলে এটিকে আরও খারাপ করছে।
ভাটার গাড়ি বন্ধ হলে রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ইজিবাইক চালক কোমল হোসেন বলেন, ‘সাদিপুরের একমাত্র পাকা সড়কটি ভাটার গাড়ির দখলে। খানাখন্দে ভরা সড়কে গাড়ি উল্টে যায়। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষার জন্য নদীর ওপারে যাওয়ার সময় পৌঁছাতে পারেন না। এর ফলে তাদের ভাড়া বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল।
সরকারি চাকুরিজীবীরা জানাচ্ছেন, সেবা না পাওয়ার কারণে তাদের জীবনে অভাব ও কষ্টের শেষ নেই।
এ বিষয়ে চরসাদিপুর পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘আমি একাধিকবার জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান এটি একটি দুর্গম ইউনিয়ন এবং তাদের সমস্যা আমরা জানি। তবে তারা লিখিতভাবে জানালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।